গাছের চারা রোপন পদ্ধতিঃ বীজ প্রস্তুতকরণ এবং বপনের যাবতীয় বিষয়
গাছের চারা রোপন পদ্ধতির ক্ষেত্রে প্রথমে আপনাকে অবশ্যই যথাযথ বা উপযুক্ত জমি নির্বাচন করতে হবে। জমি বাছাইকরনের সঠিক নির্দশনাসমূহ নিম্নে প্রদত্ত হলঃ
- জমির মাটি দোঁআশ বা বেলে দোঁআশ হতে হবে।
- নিম্নাভিমুখ বা অধিকাংশ সময়ে পানিতে ডুবে থাকে এরকম জমি নির্বাচন করা যাবে না।
- যে জমিতে বৃষ্টির পানি জমে থাকে বা বৃষ্টির পানি জমে গেলে তাৎক্ষনাত বের করার ব্যবস্থা থকেনা, সেরকম জমি নির্বাচন করা যাবে না।
- জমিতে অবশ্যই সেচের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
- জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ বায়ু এবং সূর্যের আলো থাকতে হবে।
ভালো মানের চারাগাছ নির্ভর করে কী রকম বীজ প্রক্রিয়াজাত করা হয়েছে তার উপর। যদি বীজ সঠিক ভাবে প্রক্রিয়াজাত করা হয়ে থাকে তবে সহজে ক্ষতিগ্রস্থ হয়না এবং চারার অঙ্কুরোদ্গম বৃদ্ধি পায়। গাছের চারা রোপন পদ্ধতির জন্য বীজ প্রক্রিয়াজাত করণের কয়েকটি পদ্ধতি রয়েছে। নিম্নে তুলে ধরা হলো-
গাদা করা বা চেলাইকরণ পদ্ধতিঃ (Heap or Brew Method)
এই পদ্ধতিতে প্রথমে বীজগুলোকে একটি বস্তায় রেখে ৭২ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর বস্তাটিকে রৌদ্রে শুকাতে দিতে হবে। অতঃপর বীজগুলোকে গাদা করে খড় অথবা পাতা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। এমতবস্থায় বীজগুলোকে ভেজা রাখতে হবে বিধায় স্বাভাবিক অন্তর অন্তর সেচের পানি দিতে হবে। সবশেষে ৭-১০ দিনের মধ্যে যখন বীজগুলোতে ফাটল লক্ষ্য করবেন তখন সেগুলো বপনের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত হবে। সেগুন গাছের বীজ এই পদ্ধতিতে প্রস্তুত করা হয়ে থাকে।
পানিতে ভেজানো পদ্ধতিঃ (Process By Normal Water)
বীজের ছাল নরম করার জন্য বীজগুলোকে প্রথমে ১২-৪৮ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়। এই পদ্ধতিতে বীজগুলো যথেষ্ট পানি শোষণ করে থাকে এবং অঙ্কুরিত হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়। শিম, গামার, এবং পাইনের বীজ এ পদ্ধতিতে প্রস্তুত হয়।
গরম পানি দ্বারা বিশোধক প্রক্রিয়াঃ (Process By Hot Water)
কিছু কিছু বীজের খোসা বা ছাল অধিক শক্ত প্রকৃতির হয়ে থাকে, যেগুলোকে গরম পানিতে প্রক্রিয়াকরণ করতে হয়। উদাহরণ সরূপঃ আকাশমণি, ইপিল ইপিল ইত্যাদি গাছের বীজ।
খাঁজকাটা পদ্ধতিঃ (Grooving Method)
বড় সাইজের বীজ সমূহের জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। বীজের খাঁজকাটা বাইরের আবরণ পর্যাপ্ত বাতাস ও সূর্যের আলো পায় যা অঙ্কুরোদ্গমে সাহায্য করে। আমের বীজ এ পদ্ধতির উদাহরণ।
ভেজানো ও ফাটল পদ্ধতিঃ (Soaking and Cracking Method)
এ পদ্ধতিতে বীজ ও পাতা একটি চটের বস্তায় ভরে ১২ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়। অতঃপর বীজগুলোকে রৌদ্রে শুকানো হয়। এই পদ্ধতিতে কিছু বীজ ফাটল ধরে এবং সেগুলোকেই বপন করা উচিৎ। অর্জুন, কড়াই এবং এই জাতীয় বীজ এই পদ্ধতির উদাহরণ।
বিভিন্ন ধরণের ফল বিভিন্ন সময় পাকে। আর ফল পাকিলেই বীজ সংগ্রহ করা উচিৎ। বীজ সংগ্রহের পর ভিন্ন ভিন্ন প্রকারের বীজ ভিন্ন ভিন্ন সময়ে বপন করতে হয়। কিছু কিছু বীজ বপনের পরপরই অঙ্কুরোদ্গম হয়, আবার কিছু বীজ দেরিতে অঙ্কুরিত হয়ে থাকে। সুতরাং ভিন্ন ভিন্ন প্রকারের গাছের বীজ সংগ্রহ, বপন, এবং অঙ্কুরোদগমের সময় বিভিন্ন হয়ে থাকে। নিম্নে এ সম্পর্কে দু্টি চার্ট প্রদত্ত হলো –
কাঠের গাছের বীজ সংগ্রহ, বপন এবং চারাগাছ অঙ্কুরোদগমের সময়ঃ (Season of Woody tree planting)
গাছের নাম | বীজ সংগ্রহের সময় | বীজ বপনের সময় | চারাগাছ অঙ্কুরোদগমের সময় |
---|---|---|---|
মেহগনি | ডিসেম্বর – এপ্রিল | এপ্রিল | ২০ – ৩০ দিন |
শিরিস ও শিশু | অক্টোবর – ফেব্রুয়ারি | ফেব্রুয়ারি – মার্চ | ১৫ – ২০ দিন |
শাল | জুন – জুলাই | জুন – জুলাই | ৪ – ১০ দিন |
অর্জুন | ডিসেম্বর – মার্চ | ফেব্রুয়ারি – মার্চ | ৭ – ২০ দিন |
রেইন ট্রি | ফেব্রুয়ারি – মার্চ | মার্চ – মে | ৫ – ১০ দিন |
কড়ই | জানুয়ারি – মার্চ | জানুয়ারি – এপ্রিল | ৪ – ১৫ দিন |
নীম | জুন – জুলাই | জুন – জুলাই | ৭ – ১০ দিন |
চাম্পল | মার্চ – এপ্রিল | এপ্রিল – মে | ৭ – ১০ দিন |
আকাশমণি | মার্চ – এপ্রিল | এপ্রিল – মে | ১০ – ২০ দিন |
ইপিল ইপিল | অক্টোবর – নভেম্বর | মার্চ – এপ্রিল | ৪ – ১৫ দিন |
দেবদারু | জুলাই – আগস্ট | ফেব্রুয়ারি | ৭ – ১৫ দিন |
নাগেশ্বর | অক্টোবর – নভেম্বর | ফেব্রুয়ারি | ১০ – ২০ দিন |
মনে সবুজ বৃক্ষ রাখ, তবেই গান গাওয়া পাখির সন্ধান পাবে। |
ফলের গাছের বীজ সংগ্রহ, বপন এবং চারাগাছ অঙ্কুরোদগমের সময়ঃ (Season of Fruit tree planting)
গাছের নাম | বীজ সংগ্রহের সময় | বীজ বপনের সময় | চারাগাছ অঙ্কুরোদগমের সময় |
---|---|---|---|
কাঁঠাল | মে – জুন | মে – জুন | ৫ – ৭ দিন |
জলপাই | ডিসেম্বর | ফেব্রুয়ারি | ৩০ – ৪৫ দিন |
আমড়া | আগস্ট – সেপ্টেম্বর | সেপ্টেম্বর – অক্টোবর | ৩০ – ৪৫ দিন |
পেয়ারা | জুলাই – আগস্ট | ফেব্রুয়ারি | ১৫ – ২০ দিন |
লেবু | জুলাই – আগস্ট | অক্টোবর – নভেম্বর | ৭ – ২০ দিন |
বাতাবি লেবু | সেপ্টেম্বর – অক্টোবর | ফেব্রুয়ারি | ৭ – ২০ দিন |
ডালিম | জুলাই – আগস্ট | মার্চ | ৭ – ১৫ দিন |
হরিতকি | নভেম্বর – ডিসেম্বর | ফেব্রুয়ারি | ১০ – ২০ দিন |
নারিকেল | জুলাই – আগস্ট | আগস্ট – সেপ্টেম্বর | ৩০ – ৮০ দিন |
কামরাঙ্গা | জুলাই – আগস্ট | আগস্ট | ৭ – ১৫ দিন |
পেঁপে | ডিসেম্বর – জানুয়ারি | ফেব্রুয়ারি | ৭ – ১৫ দিন |
জাম | জুন | জুন – জুলাই | ৭ – ১৫ দিন |
ফল খাওয়ার সময় এটার সৃষ্টিকর্তা কে উপলব্ধি করিও। |
আপনার অবশ্যই এরিয়া ভিত্তিক প্রয়োজন অনুযায়ী আলাদা আলাদা ভাবে গাছের বীজ বপন করা উচিৎ, যেন প্রতিটি প্রকার চারাগাছ দেখে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন। এতে আপনার চারাগাছ বিক্রি করতে সুবিধা হবে এবং এটির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এছাড়াও আপনি এই পোস্টটি পড়তে পারেন নার্সারি কাকে বলে ও নার্সারিতে ব্যবহৃত টুলস সম্পর্কে জানতে।
[…] […]