শিউলি ফুল (Nyctanthes arbor-tristis)
শিউলি ফুল আমাদের দেশের একটি জনপ্রিয় ফুল। অনেকেই ইন্টারনেটে Google, Bing বা অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে শিউলি ফুলের ছবি খুঁজে থাকেন। এটি আমাদের দেশে শেফালী ফুল নামেও পরিচিত। আমাদের দেশে শিউলি ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ ভাল লাগে না এমন মানুষ পাওয়া খুবি কঠিন। এই ফুল এর বৈজ্ঞানিক নাম “Nyctanthes arbor-tristis”। এটি মূলত দেখা যায় এশিয়ার থাইল্যান্ড, বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল,পাকিস্তান এলাকা জুড়ে। শিউলি ফুল এর গাছ ১০ মিটারের মত লম্বা হয় এবং গাছের ছাল বা বাকল ধূসর নরম বিশিষ্ট হয়ে থাকে।
শিউলি গাছের পাতা গুলো সাধারণত ৬-৭ সেন্টিমিটার পর্যুন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এই ফুল সুগন্ধি তৈরিতে ব্যবহার হয়ে থাকে। এতে রয়েছে ৫-৭ টি বৃতি ও লালচে -কমলা টিউব আকৃতির বৃন্ত। এই গাছ এর ফল চেপ্টা ও বাদামি হয়ে থাকে। শিউলি ফুল সাধারণত শরৎ কালে ফোটে। এই ফুল রাতে ফোটে এবং সকাল বেলা ঝরে যায়। এটি অসম্ভব সুন্দর দৃশ্য তৈরী করে শরৎ ও হেমন্তের সকালে শিশির ভেজা ঝরে থাকা শিউলি ফুলে।
শিউলি ফুলের ব্যবহার ও বৈশিষ্টসমূহঃ (Uses of Sheuli Ful)
- নামঃ শিউলি ফুল।
- প্রতীকঃ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য প্রতীক।
- প্রচলিত নামঃ শেফালিকা, পারিজাত, পারিজাতা, পারিজাতাকা, প্রজক্তা, হারসিঙ্গার, খারাপাত্রাকা, রাগাপুস্পি, নাইট ফ্লাওয়ার জেসমিন।
- এলাকা ভিত্তিক নামঃ বাংলা ভাষায় – শিউলি বা শেফালি, সংস্কৃত ভাষায় – নালাকুমকুমাকা, হারসিঙ্গারাপুস্পক, সুকলাঙ্গি, রাজানিহাসা, মালিকা, বিজয়া, নিসাহাসা, প্রহার্ষিনী, প্রভোলানালিকা, বাথারি, ভুথাকেশি, সীতামাঞ্জারি, সুবাহা, নিশিপুস্পিকা, প্রযক্তা, প্রযক্তি, তামিল ভাষায় – পাভাঝা মাল্লি বা পাভালা মাল্লি, ওড়িয়া ভাষায় – গঙ্গা শিউলি, মনিপুরী ভাষায় – সিঙ্গারেই, অসমিয়া ভাষায় – শেওয়ালি (শেৱালি), হিন্দী / হিন্দিভাষা– হরসিঙ্গার/হরশৃঙ্গার, পারিজাত, মারাঠি / মারাঠিভাষা– পারিজাথক।
- ব্যবহারঃ শিউলি ফুল এর ব্যবহার নানাবিধ। এই ফুল হলুদ রঙ তৈরী করতে ব্যবহার করা হয়। এই ফুলের বোঁটা গুলো শুকিয়ে গুঁড়ো করে পাউডার করে হালকা গরম পানিতে বা জলে মেশালে চমৎকার রঙ হয়। এই ফুল পুজোর কাজে বিশেষ ভাবে করা হয়।
- ঔষধবিজ্ঞানঃ Immunostimulant, Hepatoprotective, antileishmanial, Antiviral এবং Antifungal ঔষধ গুলো তৈরি করতে শিউলি ফুল এর বীজ, পাতা ও ফুল ব্যবহার করা হয়।
এর পাতা sciatica, arthritis, fevers, নানারকম যন্ত্রণাদায়ক সমস্যার চিকিৎসার জন্যে ঔষধ বা বড়ির মত করে আয়ুর্বেদিক ঔষধ তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়।
মাথায়র খুসকি দূর করতে শিউলি-বীজ উপকারী। - চিকিৎসায় ব্যবহারঃ ১.সাইটিকার ব্যথায়- প্রতিদিন সকালে ২-৪ টি শিউলি পাতা ও ২-৪ টি তুলসী পাতা একসাথে কুটে নিয়ে জলে ফুটিয়ে সেই জল ছেঁকে সকাল ও সন্ধ্যায় খেতে হবে।
২.আর্থারাইটিস এর ব্যথায়- প্রতিদিন সকালে চা এর ন্যয় এক কাপ জলে ২টি শিউলি পাতা ও ২টি তুলসী পাতা ফুটিয়ে ও ছেঁকে খেতে হবে। এটি এক ধরনের হার্বাল টি।
টবে শিউলি ফুলের চাষ ও পরিচর্যা (Cultivation and Care of Sheuli)
শিউলি গাছের বাগান করার জন্য যাদের ছাদ বা বারান্দা সম্বল, তারা টবে এই গাছ লাগাতে পারেন। তবে তার জন্য প্রয়োজন অনেক ধৈর্য্য শক্তি। কারণ গাছের ঠিকঠাক পরিচর্যা করলে গাছ লাগানোর ১০-১২ মাস এর মাঝেই ফুল আসতে শুরু করে, তবে তা পরিমাণে অল্প হয়। ৩০-৪০ মাস পরে ফুল হয় মনমতো। শিউলি ফুল অগস্টের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে জানুয়ারির মাঝামাঝি অবদি ফোটে, এই সময় সবচেয়ে বেশি ফুল হয়। অনেক গাছে তো বারো মাসেই ফুল হয়। শিউলি গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময় এপ্রিল মাস। বীজ থেকে চারা তৈরি বা নার্সারি থেকে গাছ এনে, দুই ভাবেই টবে গাছ লাগানো সম্ভব। তবে টবের জন্য নার্সারির গুটি কলমের গাছই উপযুক্ত। এতেকরে গাছের বৃদ্ধি ও ফুল দুই খুব দ্রুত হয়।
টবে গাছ বড় হওয়ার সাথে সাথে টব বদলানো জরুরি তার সাথে শিকড়ও ছাঁটতে হয়। শিউলি গাছের শিকড় খুব দ্রুত বাড়ে, তাই গাছ বড় হওয়ার সাথে সাথে খেয়াল করে টব বদলানো জরুরি। শিউলি গাছের কলম প্রথমে ৪/৬ ইঞ্চি টবে বসাতে পারেন। তারপর তা বড় হওয়ার সাথে সাথে ৮/১০ ইঞ্চির টবে বসাতে হবে। গাছের গোড়া শক্ত হলে এবং ভালমতো ফুল হওয়া শুরু হলে ১২ ইঞ্চির টবে স্থানান্তরিত করলে গাছ বহুদিন বাঁচবে। মনে রাখা উচিত সময় মতো টব বদলানো ও শিকড় ছাঁটা দরকার।
শিউলি ফুলের ছবি (Picture Of Sheuli flower)
এখানে শিউলি ফুলের বেশ কিছু সুন্দর ছবি আপলোড করা হয়েছে, আপনি যদি আরো সুন্দর ও বিভিন্ন সাইজের শিউলি ফুলের ছবি ডাউনলোড করতে চান তাহলে পোস্টের নিচে কমেন্ট করুন।