বনসাই কি? বনসাই গাছ বানানোর পদ্ধতিসহ যাবতীয় বিষয়
বনসাই কি? ( What is Bonsai ? )
বন অর্থ থালা জাতীয় অগভীর পাত্র এবং সাই অর্থ গাছ অর্থাৎ বনসাই অর্থ একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ থালা জাতীয় অগভীর পাত্রে শক্ত কাণ্ড বিশিষ্ট গাছ। যা অন্যান্য গাছের তুলনায় নান্দনিকভাবে ছোট আকৃতির হয়ে থাকে।
অন্যভাবে বলতে গেলে বনসাই গাছ বলতে পাত্রের ছোট আকৃতির গাছ কে বোঝায় আর এই বনসাইকে বলা হয় একমাত্র লিভিং আর্ট বা জীবন্ত শিল্প। কারণ এখানে গাছটাকে সুন্দর করে কেটে কেটে একটা পরিপাটি হিসেবে এনে তারপরে একে নান্দনিক করা হয়।
বনসাই গাছ তৈরির ইতিহাস
প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার পাত্রে বা টবে গাছ বা গাছের চারা রোপণের ইতিহাস ঘাটলে, ৪০০০ পূর্বাব্দে পাথর কেটে গাছের চারা রোপণের হদিস পাওয়া যায়। প্রাচীন ভারতে ওষুধের জন্য টবে বা পাত্রে ঔষধি গাছ লাগানোর প্রচলন ছিল , ৪২০ পূর্বাব্দে চীন সভ্যতায় প্রথম বেনজাইল শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে থাইল্যান্ডে, জাপানে, কোরিয়ায়, এবং ভিয়েতনামে ভিন্ন আকারে এর চর্চার বিস্তার লাভ করে। প্রথম প্রথম জাপানিরা ঘর সাজাতে ছোট আকৃতির পাত্রে জন্মানো বামন জাতীয় গাছ ব্যবহার করত। অতঃপর জাপানিরা তুলনামূলকভাবে কম গভীর পাত্রে ক্ষুদ্র গাছ পরিচর্যা করার সাথে সাথে চৈনিক বেনজাইল শব্দের উচ্চারণ পরিবর্তন করে ফেলে। যা পরবর্তীতে হয়ে যায় বনসাই।
বনসাই বানানোর পদ্ধতি (Making )
শত শত বছর ধরে জাপানিরা হাতে-কলমে বনসাই চর্চা করে আসছে। শতবছরের বনসাই চর্চা এখন একটি জীবন্ত শিল্পে রূপ নিয়েছে। বনসাই শিল্পে জাপানিরা এখনও তাদের শ্রেষ্ঠত্ব অক্ষুন্ন রাখতে পেরেছে। জাপানিদের অনেক পরিবার বংশগতভাবে এর চর্চা করে চলেছে।
যেহেতু এই শিল্পের প্রধান উপাদান একটি জীবন্ত গাছ তাই একে একেবারে তৈরি করা বা রূপান্তর করা যায় না। বনসাই অত্যন্ত দামী শিল্প। বনসাই করা সময় সাপেক্ষ এবং এক মহান শিল্পকর্ম এর জন্য সারা বছর ধরে পরিচর্যা করতে হয়।
অনেকের মতে বনসাই হল এমন এক মহান শিল্পকর্ম যার জন্য দরকার কবির মতো কল্পনা শক্তি, হস্তশিল্পের মত সুদক্ষ হাতের কাজ , চিত্র শিল্পের মতো দৃষ্টির গভীরতা এবং অভিজ্ঞ চাষীর মত চাষাবাদ সম্পর্কিত গভীর জ্ঞান।
বনসাই এক অনন্য শিল্পকর্ম। তবে এই শিল্প সম্পূর্ণ জীবন্ত। অন্য প্রাণহীন শিল্পের সাথে শুধু বনসাইয়ের এতোটুকুই পার্থক্য।
বনসাই আসলে একটি সাধনার বিষয় , এটা কিন্তু রাতারাতি হয় না. মাসের-পর-মাস লাগে, বছরের পর বছর লাগে একটি বনসাই করতে। বনসাই করতে গেলে আপনাকে বিজ্ঞান জানতে হবে এবং আপনাকে এগ্রিকালচার বা চাষাবাদ জানতে হবে। তবে আপনি যদি একবার বনসাই করেন তবে আপনার কাছে মনে হবে প্রতিটা বনসাই আপনার একটা একটা সন্তানের মত। এগুলোকে লালন-পালন করে বড় করতে হয়।
কোন সারের কি কাজ আপনাকে এগুলো জানতে হবে তাহলেই আপনি বনসাই করতে পারবেন । অন্যথায় আপনি বনসাই গাছ কিনে আপনার সুন্দর ঘরকে সাজিয়ে নিতে পারেন।
বনসাই গাছ তৈরী করার জন্য উপযুক্ত জাত
বংশের জন্য সবথেকে উপযুক্ত হলঃ
- যে সকল গাছের বৃদ্ধি ধীরে ধীরে হয়
- গাছের কান্ড মোটা হয়
- বছরে একবার পাতা ঝরে
- বয়স হলে গাছের ছাল মোটা হয়
- গাছ সতেজ থাকে
- তবে বীজ থেকে গাছ তৈরী করা থেকে কলম/গ্রাফটিং করা ভালো। কারণ এক্ষেত্রে আপনি গাছের কান্ড কে ইচ্ছামত পরিবর্তন করতে পারবেন। আপনার মন মত কাটছাঁট করে সাজাতে পারবেন। তাছাড়া বীজ থেকে বনসাই করলে ৮ থেকে 12 বছরের বেশি সময় লেগে যায়
- আর ডাল কেটে করলে এটা ৪ থেকে ৬ বছর লাগে।
বনসাই গাছের নাম
বাংলাদেশে বনসাই করা যেতে পারে এমন কিছু গাছ হচ্ছে,
বট
বকুল
শিমুল
পাকুড়
তেঁতুল
শিরিষ
বাবলা
পলাশ
বিলিতি বেল
ছাতিম
হিজল
জাম
নিম
বেলি
গাব
শেফালী
পেয়ারা
হেওরা
ডালিম
তমাল
জাম্বুরা
কমলা
তুলসী
বহেরা
বরই
বর্ডার
কামিনী
মেহেদী
কড়ই
অর্জুন
জারুল
জুনিপার
নরশিংধ
করমচা
লুকলুকি
কৃষ্ণচূড়া
কদবেল
দেবদারু
সাইকেশ
হরিতকি
কামরাঙা
আমলকি
নীল জবা
লাল জবা
কুসুমফুল
এশফেরা
অশ্বথ বট
নুডা বট
পাকুর বট
কাঠলি বট
রঙ্গন ছোট
রঙ্গন বড়
নিম সুন্দরী
লাল গোলাপ
খই বাবলা
কনকচাঁপা
গোলাপজাম
সাদা নয়নতারা
স্টার কুইন
বাগান বিলাস
হেলিকুনিয়া
গোলাপিটা ফুল
পান বিলাস
লালা পাতাবাহার
লাল জামরুল
চায়না বাঁশ
সন্ধ্যা মালতী হলুদ
যজ্ঞ ডুমুর
আলমন্ডা
এলাচি
বনসাই গাছ এর প্রকারভেদঃ
গাছের ধরন ও চেহারা পেতে নানান রকম পর্যায়ে রয়েছে। যেমন বাহারি তাদের ধরণ তেমনি বাহারি তাদের আকৃতি তেমনি বাহারি তাদের নাম. ধরা যাক কোনো বনসাই টবের উপর বা বৃক্ষের গোড়া হইতে দুটি কান্ডের সৃষ্টি করলে তাকে twin trunk bonsai বলা হয়। আবার টবের উপর বা বৃক্ষের গোড়া হইতে তিনটি কান্ডের সৃষ্টি করলে তাকে triple trunk bonsai বলা হয়। এভাবে অন্তত ১১ ধরনের বনসাই ব্যাপকভাবে পরিচিত
বাংলাদেশের বনসাই পরিচয় খুব বেশিদিনের নয়। 25 থেকে 30 বছর আগে ব্যাপকভাবে বাংলাদেশ বনসাই পরিচিতি লাভ করেছে।
বাড়ির ছাদে ও বনসাই করা যায়। সুন্দর বাড়ির ডিজাইন থাকলে আপনি বনসাই ব্যবহার করতে পারেন। বসে আপনার বাড়ির সুন্দর্য্য অনেক বাড়িয়ে দিবে। বাড়ি করার জন্য যদি বাড়ি নির্মাণ খরচ জেনে কাজে হাত দিয়ে পারেন। অনলাইন বাড়ির ডিজাইন করার জন্য NBconsultant ভালো ও বিস্বস্ত একটা প্রতিষ্ঠান।
বনসাই চাষ ও পরিচর্যাঃ ( Bonsai Planting & Care )
মাটি নির্বাচন
বনসাই চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী হলো দো-আঁশ মাটি। ভালো ফল পেতে মাটির সাথে ইটের গুড়ো, পাথরের গুড়ো, পোড়ামাটির গুড়ো, বালি, কম্পোস্ট সার , ছাই ইত্যাদি মেশানো খুবই প্রয়োজন। আরো ভালো হবে যদি আপনি মাটির সাথে গোবর সার, কেঁচো সার, জৈব পদার্থ ইত্যাদি মেশাতে পারেন। মাটিকে এমন ভাবে তৈরি করে নিতে হবে যেন পানি নিষ্কাশনে কোনো সমস্যা না হয়।
চারা সংগ্রহ
বনসাই তৈরির জন্য আপনি যে কোন স্থান থেকে চারা গাছ সংগ্রহ করতে পারেন। কলম/গ্রাফটিংয়ের চারা সংগ্রহ করতে পারেন আবার বীজ থেকেও চারা তৈরী করে নিতে পারেন। কলমের মধ্যে কাটিং,লেয়ারিং,এয়ার লেয়ারিং ইত্যাদি উপায়ে চারা সংগ্রহ করা যায়। নার্সারি থেকে চারা লাগানো যায়। আবার, বট, পাকুড়, অশ্বত্থ গাছের চারা পুরাতন দেয়াল,পুরাতন ইটের স্তুপ থেকেও সংগ্রহ করা যায়।
কাটিং হতে চারা সংগ্রহঃ
গুটি কলম পদ্ধত্তিতে বনসাই কিভাবে করে ?
প্রায় সব ধরণের Ficus variety এর জন্য গুটি কলম পদ্ধতি ফলো করা যেতে পারে। এখানে একটি Ficus variety এর কলম পদ্ধতি তুলে ধরা হলো –
- প্রথমে ডাল নির্বাচনের ক্ষেত্রে বনসাই উপযোগী ১-৫ বছরের ডাল সংগ্রহ করে নিতে হবে।
- অতঃপর কাটিং এর জন্য চোখ নির্ণয় করতে হবে।এটি যেকোনো স্থান থেকেই নির্বাচন করা যাবে। তারপর চোখের থেকে সামান্য একটু নীচে বাকল কাটিং করতে হবে।
- চোখ নির্বাচন ও বাকল কাটিংয়ের পর ম্যাক্সিমাম ২১ দিনের মধ্যে শিকড় বের হবে।
- গুটি কলম করতে একটি ধারালো চাকু, অল্প কিছু মাটি, গোবর সার, কিছু সুতা এবং সিকেচার প্রয়োজন হয়।
- বাকল কাটিংয়ের পর যে শিকড় বের হবে তার রং বাদামি হলে সিকেচার বা হেকশো ব্লেড দিয়ে কাটিং করে নিতে হবে।
- অতঃপর মাটি ও গোবর সার যথাক্রমে ৭০% ও ৩০% ভাগ নিয়ে ভালো করে মিক্সিং করতে হবে। সবশেষে ৮” উচু টবে এটিকে লাগাবেন এবং ৭ দিন সূর্যের আলো থেকে দূরে রেখে তারপর রোদে দিবেন। এই পদ্ধতি অনুসরণ করে ভালোমানের গাছ তৈরী করে নিতে পারবেন।
মাটি বা জমি থেকে চারা সংগ্রহ করার পদ্বতিঃ
বর্ষাকালের শুরুতে অথবা শীত কালের শেষে চারা সংগ্রহ করার উত্তম সময়। চারা সংগ্রহের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত ধাপ গুলো অনুসরণ করতে পারেন।
- প্রথমে যে চারাটি সংগ্রহ করবেন সেটি নির্বাচন করে চারাটির চারপাশে পানি দিয়ে বেশ কিছুদিন ভিজিয়ে রাখুন।
- অতঃপর গুড়ির চারপাশে ১.৫ মিঃ বাদ রেখে ০.৭৫ মিঃ চওড়া ও ১.৫ মিঃ গভীর একটি গোলাকার নালা কাটতে হবে।
- এবার নালাটির মাটি সম্পূর্ণ তুলে এটির মধ্যে সমপরিমাণ বালি ও পাতাপচা সার দিয়ে ভরাট করে রাখুন।
- ৩/৪ সপ্তাহের মধ্যে নালাটি মধ্যে নতুন শিকড় দেখা যাবে। তারপর গাছের নিচের দিকে সুড়ঙ্গ করে মূল শিকড়ের তিন ভাগের এক ভাগ কেটে ফেলতে হবে। যার ফলে শাখা শিকড়গুলোর কার্যকারিতা বৃদ্ধি।
- এরপর ১০ দিন বাদে আরও এক তৃতীয়াংশ এবং তার পরবর্তী ১০ দিন পর বাকী তিন ভাগের এক ভাগ মূল শিকড় কেটে ফেলে দিন।
- এখন আরও ১০ দিন অপেক্ষার পর চারা গাছটিকে সাবধানে মাটি ও শিকড় সহ তুলে আনবেন। চেষ্টা করবেন বিকালের দিকে চারা তোলার এবং চারা গাছের শিকড়কে ভিজা মস দিয়ে অবশ্যই ঢেকে রাখবেন।
পোড়া বাড়ির দেয়াল ও পাথুরে জমি থেকে চারা সংগ্রহ করার পদ্বতিঃ
পোড়ো দালানের দেয়াল ও পাথরের খাঁজ থেকে চারা গাছ সংগ্রহ করা খুবই সহজ। এক্ষেত্রে গাছ সংগ্রহ করার জন্য ১-২ সপ্তাহ পূর্ব থেকেই পানি সেচ দিয়ে গাছের চারপাশ ভিজিয়ে রাখবেন। অতঃপর পাথর বা ইটগুলোকে ধীরে ধীরে সতর্কতার সাথে ভেঙ্গে ফেলে চারাকে শিকড়সহ তুলে আনতে হবে।
বনসাই গাছের পাত্র
বনসাই এর জন্য তেমন বড় ধরণের পাত্রের প্রয়োজন নেই। অপেক্ষাকৃত অনেক ছোট পাত্রে বনসাই গাছ তৈরী করা সম্ভব। তবে বনসাই এর টব বা পাত্রের নিচে পানি নিষ্কাশন এর জন্য অবশ্যই ছোট ছিদ্র রাখা হয়ে থাকে।
বনসাই গাছ রোপন এর ধাপসমূহ :
সাধারণত বর্ষাকালে বনসাই গাছ রোপন করা হয়ে থাকে। তবে আপনি বছরের অন্যান্য ঋতুতেও চারা রোপণ করতে পারবেন।
- কাণ্ড, শেকড়, শাখা-প্রশাখা ও পাতা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
- টবের ছোট গাছটিকে বয়োবৃদ্ধ গাছের ভঙ্গিমা আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
- বনসাইকে যে মডেলের রূপ দিতে চান তা স্থির করে সেই অনুযায়ী শাখা বাছাই করতে হবে।
- সাধারণত জোড়া পাতার কক্ষ থেকে কাণ্ডের দু’পাশে দু’টি শাখা গজিয়ে থাকে। বাছাই পদ্ধতি অনুযায়ী এর একটিকে রাখতে হবে।
- কুঁড়িভাঙা চারার ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় বেঁটে করে রাখতে ও ঝোঁপালো রাখার জন্য কুঁড়ি বা পত্রমুকুল ভেঙে দেওয়া উচিত।
- ক্ষুদে বনসাই করার জন্য অবশ্যই এটা করতে হবে। কারণ, সবসময় বাড়ন্ত ডগা মাত্র দু’টি পাতা রেখে কেটে না দিলে গাছ বড় হয়ে যেতে পারে।
- কুঁড়ি ভেঙে ফেলার মূল লক্ষ্য হলো নিচের পাতার কাঙ্ক্ষিত মুলকে বাড়তে বাধ্য করা। কারণ ওগুলো বাড়লে গাছের শাখার সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে ও গাছ ঝোঁপালো হবে।
বনসাই গাছের শিকড় বা এরিয়াল রুট কিভাবে বের করবেন?
- প্রথমে বনসাই গাছের ধরণ অনুযায়ী গঠন ঠিক করে নিতে হবে। সাধারণত একটা বনসাই গাছের গঠন আসতে কমপক্ষে ২-৩ বছর সময় লাগে এবং এটা নির্ভর করে ভালো দক্ষতার উপর।
- গাছর গঠন তৈরী হলে গাছটির আকার আনুযায়ী বড় টবে বা পাত্রে বনসাই মিক্স মাটি দিয়ে গাছের গোড়ার মাটিসহ গাছটিকে লাগিয়ে দিতে হবে। মার্চ -এপ্রিল হচ্ছে উত্তম সময়।
- গাছ লাগানোর পর ১ বছরের মধ্যে ডাল কাটিং না করলে, সহজে অনেক এরিয়াল রুট বা শিকড় বের হয় এবং ডালগুলো পূর্ণ পরিপক্ব হওয়াতে কুঁড়ি বেশি বের হবে।
- গাছের গঠন সঠিক না হলে এরিয়াল রুট গুলো কেটে ফেলতে হবে কারণ গাছের গঠন হওয়ার আগে এরিয়াল রুট Allow করলে গাছের আগা মোটা গোড়া চিকন হয়ে ব্যালেন্স নষ্ট হয়ে যাবে।
বনসাই গাছের পরিচর্যা ও যত্ন
শাখা বাছাই : বনসাইকে যে মডেলের রূপ দেয়া হবে তা স্থির করে শাখা বাছাই করা দরকার। জোড়া পাতার কক্ষ থেকে কান্ডের দু’পাশে দু’টি শাখা গজায়। বাছাই পদ্ধতি অনুসারে এর একটিকে রাখতে হবে। নিচেরটি ডানদিকে রাখলে তার ওপরেরটি বামদিকে রাখতে হবে। আসলে বনসাইয়ের কাণ্ডের রূপ সামনের দিকে কোন শাখা থাকবে না। থাকবে কেবল ডান ও বাম দিকে এবং পেছনে কাণ্ডের মাথার দিকেও শাখা থাকতে হবে।
শাখা ছাঁটাই : প্রায়শই বনসাইয়ের বয়স ৩-৪ বছর হলে তখন প্রুনিংয়ের প্রয়োজন হয়। বাছাই করা মোটা শাখাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কাটতে হয়। এর জন্য যে অস্ত্রটি ব্যবহার করা উচিত তার নাম কনকেভ কাটিং প্লায়ারস এর কাটার ধরন পৃথক। কাটার স্থানের চারদিক থেকে ছাল বেড়ে তাড়াতাড়ি তা ঢেকে দেয়। বন সাই পরিচর্যার জন্য স্পেশাল যন্ত্রপাতি পাওয়া যায শুধুমাত্র সেই গুলিই ব্যবহার করুন।
বনসাই গাছের মাটি পরিবর্তনের নিয়মাবলী
- মার্চ – মে মাসের মধ্যে বছরে একবার মাটি পরিবর্তন করা উচিৎ। মাটি পরিবর্তন এর জন্য বর্ষাকাল ভালো নয়।
- গাছের মাটি ৯০% শুকনো থাকা আবস্থায় মাটি পরিবর্তন করা অতি উত্তম। মাটি ভেজা থাকলে গাছের মাটি পরিবর্তন করা উচিৎ নয় কারণ এতে গাছের ক্ষতি হতে পারে তাছাড়া ভেজা অবস্থায় মাটি পরিবর্তন করা অসুবিধাজনক।
- মাটি পরিবর্তনের সময় মূল মাটি বা মাদার সয়েল রেখে বাকি মাটি ফেলে দিতে হয়।
- গাছের মোটা শিকড়গুলো সুন্দরভাবে কাটতে হবে যাতে স্থানান্তরে কোনো সমস্যা না হয়।
- গাছ যেন হেলে না যায় সেদিকে খেয়াল রেখে নতুন টব বা পাত্রে গাছটিকে স্থানান্তর করবেন ।
- গাছ লাগানোর সময় মাটি বেশি চাপা যাবেনা এতে পানি নিষ্কাশনে সমস্যা হয়। প্রয়োজন হলে গোড়ার স্থানে হলকা চাপবেন।
- মাটি পরিবর্তনের পর গাছের অতিরিক্ত পানি লাগে না তাই প্রয়োাজন মতো পানি দিতে হবে যাতে মাটি বেশি দিন ভেজা বা সেঁতসেঁতে না থাকে। টবের মাটি ভেজা থাকলে সেটি শুকানোর পর দ্বিতীয় বার পানি দিতে হবে।
- মাটি পরিবর্তন করার পর আলো – বতাস চলাচল করতে পারে এমন ছায়াযুক্ত স্থানে ৭ দিন রেখে তারপর রোদে দিতে হবে।
বনসাই গাছের ওয়ারিং বা তার বাঁধা
- অনেকেরই ভুল ধারণা রয়েছে যে গোটা গাছে তার পেঁচালে বনসাই হয়ে যাবে। আসলে গাছের সব ডাল ওয়ারিং করার দরকার হয় না।
- বর্ষাকালে গাছ ওয়ারিং করা যাবেনা কারণ এই সময় গাছের ডালের নমনীয়তা কম থাকে।
- ওয়ারিংয়ের জন্য এলুমিনিয়াম বা তামার তার ব্যাবহার করা সবথেকে ভালো।
- ওয়ারিং দুই ভাবে করা হয়ে থাকে একটি তার পেঁচিয়ে করা হয় এবং অপরটি টানা দিয়ে। তার পেচিয়ে ওয়ারিং করলে সৰ্বোচ্চ ৪০ দিন পর খুলে দেখা হয়। যদি ডাল সঠিকভাবে না থাকে তবে পুনরায় ওয়ারিং করতে হবে।
- ওয়ারিং এর সময় নির্ভর করে গাছের গ্রোথের উপর, গ্রোথ ভালো থাকলে স্বল্প সময়ে ওয়ারিং সম্পন্ন করা যায়।
- খেয়াল রাখা দরকার গাছে যেন গভীর দাগ না পড়ে। দাগ পড়লে গাছের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায় । যদি দেখেন গাছে হালকা দাগ পড়েছে তখন ওয়ারিং খুলে ফেলবেন।
বনসাই গাছের ছবি ( Bonsai Pictures )
কোন কোন গাছের বনসাই হয় ?
বনসাই হয় এমন গাছের সংখ্যা অনেক। নিম্নে বনসাই গাছের একটি তালিকা দেওয়া হলঃ
- বট
- বকুল
- শিমুল
- পাকুড়
- তেঁতুল
- শিরিষ
- বাবলা
- পলাশ
- বিলিতি বেল
- ছাতিম
- হিজল
- জাম
- নিম
- বেলি
- গাব
- শেফালী
- পেয়ারা
- হেওরা
- ডালিম
- তমাল
- জাম্বুরা
- কমলা
- তুলসী
- বহেরা
- বরই
- বর্ডার
- কামিনী
- মেহেদী
- কড়ই
- অর্জুন
- জারুল
- জুনিপার
- নরশিংধ
- করমচা
- লুকলুকি
- কৃষ্ণচূড়া
- কদবেল
- দেবদারু
- সাইকেশ
- হরিতকি
- কামরাঙা
- আমলকি
- নীল জবা
- লাল জবা
- কুসুমফুল
- এশফেরা
- অশ্বথ বট
- নুডা বট
- পাকুর বট
- কাঠলি বট
- রঙ্গন ছোট
- রঙ্গন বড়
- নিম সুন্দরী
- লাল গোলাপ
- খই বাবলা
- কনকচাঁপা
- গোলাপজাম
- সাদা নয়নতারা
- স্টার কুইন
- বাগান বিলাস
- হেলিকুনিয়া
- গোলাপিটা ফুল
- পান বিলাস
- লালা পাতাবাহার
- লাল জামরুল
- চায়না বাঁশ
- সন্ধ্যা মালতী হলুদ
- যজ্ঞ ডুমুর
- আলমন্ডা
- এলাচি
বনসাই গাছ নিয়ে আরো কিছু প্রশ্ন ও উত্তর ( QnA )
বনসাই গাছে তার বাঁধার নিয়ম কি ?
কাণ্ড বা শাখাকে সুন্দর, সুঠাম ভঙ্গিমায় আনতে যেসব কৃত্রিম উপায় অবলম্বন করা হয় তার বাঁধা তাদের মধ্যে অন্যতম। সরল শাখায় তার জড়িয়ে আঁকাবাঁকা রূপ দেয়া যায়। কাণ্ডের জন্য মোটা তার ও শাখার জন্য সরু তার প্রয়োজন। সাধারণত এজন্য তামার তার অথবা এলমুনিয়ামের তার ব্যবহার করা হয়। মনে রাখা দরকার, তার জড়ানোর ফলে গাছ বেশ দুর্বল হয়ে পড়ে। অনেক দিন তার পেচিয়ে রাখলে গাছের ডাল মোটা হয়ে তার ভিতরে ঢুকে যেতে থাকে। ফলে গাছের সুন্দর্য নষ্ট হয়। তাই তার পেচিয়ে রাখার নির্দিষ্ট কোন সময় নাই। যখনই তার গাছের বাকলের ভিতর ঢুকে যেতে চাইবে তখনই তার খুলে দিতে হবে এবং কিছু দিন পর উল্টাভাবে আবার পেচাতে হবে। এভাবে ধিরে ধিরে গাছ নির্দিষ্ট আকৃতিতে রূপ নিবে।t
বনসাই গাছের উপকারিতা কি ? ( Usefulness )
বনসাই গাছ শুধুমাত্র সৌন্দর্যই বহন করে না, বরং এদের কিছু উপকারিতাও রয়েছে। বনসাই গাছের উপকারিতা ও ব্যবহার খুব বেশি না হলেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে ঘর সাজানোর পাশাপাশি ইন্টেরিয়র ডিজাইন করার জন্য বনসাই ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
স্ট্রেস কমানো
স্ট্রেস কমানোতে বনসাই গাছ বেশ উপকারী। এটি আপনাকে মানসিক প্রশান্তি দিয়ে আপনার জীবনকে গতিময় রাখতে সাহায্য করে। বনসাই গাছ আপনার অফিসে অথবা বাড়িতে রাখতে পারেন। এটি আপনার মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করবে, যার ফলে আপনার হতাশা ও দুঃশ্চিন্তা কমে যাবে। মানসিক প্রশান্তি ও ধৈর্যশক্তি বৃদ্ধির জন্য বনসাই খুবই পজেটিভ ইমপ্যাক্ট রাখে। আর তাই আমি মনে করি আপনার বনসাইয়ের সংস্পর্শে থাকা ভালো।
বিশুদ্ধ বাতাস
বনসাই এর অন্যতম গুন্ হলো এটি বাতাসকে বিশুদ্ধ করে. বাতাসের দূষণ কমাতে পারে বিধায় ফুঁসফুঁসের রোগীদের জন্য বেশ উপকারী।
কোন কোন গাছের বনসাই হয় ?
১. বট
২. বকুল
৩. শিমুল
৪. পাকুড়
৫. তেঁতুল
৬. শিরিষ
৭. বাবলা
৮. পলাশ
৯. বিলিতি বেল
১০. ছাতিম
১১. হিজল
১২. জাম
১৩. নিম
১৪. বেলি
১৫. গাব
১৬. শেফালী
১৭. পেয়ারা
১৮. হেওরা
১৯. ডালিম
২০. তমাল
২১. জাম্বুরা
২২. কমলা
২৩. তুলসী
২৪. বহেরা
২৫. বরই
২৬. বর্ডার
২৭. কামিনী
২৮. মেহেদী
২৯. কড়ই
৩০. অর্জুন
৩১. জারুল
৩২. জুনিপার
৩৩. নরশিংধ
৩৪. করমচা
৩৫. লুকলুকি
৩৬. কৃষ্ণচূড়া
৩৭. কদবেল
৩৮. দেবদারু
৩৯. সাইকেশ
৪০. হরিতকি
৪১. কামরাঙা
৪২. আমলকি
৪৩. নীল জবা
৪৪. লাল জবা
৪৫. কুসুমফুল
৪৬. এশফেরা
৪৭. অশ্বথ বট
৪৮. নুডা বট
৪৯. পাকুর বট
৫০. কাঠলি বট
৫১. রঙ্গন ছোট
৫২. রঙ্গন বড়
৫৩. নিম সুন্দরী
৫৪. লাল গোলাপ
৫৫. খই বাবলা
৫৬. কনকচাঁপা
৫৭. গোলাপজাম
৫৮. সাদা নয়নতারা
৫৯. স্টার কুইন
৬০. বাগান বিলাস
৬১. হেলিকুনিয়া
৬২. গোলাপিটা ফুল
৬৩. পান বিলাস
৬৪. লালা পাতাবাহার
৬৫. লাল জামরুল
৬৬. চায়না বাঁশ
৬৭. সন্ধ্যা মালতী হলুদ
৬৮. যজ্ঞ ডুমুর
৬৯. আলমন্ডা
৭০. এলাচি
বনসাই গাছ কোথায় পাওয়া যায় ?
বনসাই গাছের দাম কত ?
বনসাই করা কি জায়েজ ?
